জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের বদৌলতে বদলে গেল সাকিবুল হাসানের জীবন - Sakibul Hasan Creative

           শারীরিক অক্ষম সাকিবের হাতে ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান

সাকিবের পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছে। এক পায়ে ভর করে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যায় সে। মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন বুনে। ঠিকই সাকিব তার লক্ষ্যে ছুটে চলছে অবিরত। তবে মাঝেমাঝে সাকিবের কানে বাজে অবজ্ঞার সুর। পড়া প্রতিবেশী অনেকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত তাকে। সাকিব জানালো তার এখনো মনে পড়ে, " বিকল পা নিয়ে পড়ালেখা করে কিই-বা করবে! সুস্থ স্বাভাবিক মানুষরাও পড়ালেখা করে কিছু করতে পারছে না, তুমি একজন প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ালেখা করে কি করবে? সাকিব সংশয়ে পড়ে যেতো। পাছে আরো কত লোকে কত কিছু না বলে, এই ভয়ে। ফলে সাকিবের স্বপ্ন 'সংশয়ে সংকল্প সদা টলে পাছে লোকে কিছু বলে' কবিতা চরণের মতো সংশয়ে থাকতো। খারাপ লাগতো, তারপরও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিলো সাকিবের।ম

ধ্যবিত্ত পরিবার তার উপর শারীরিক অক্ষমতা দুই-ই মিলে সাকিবের জন্য পড়ালেখা করার ব্যাপারটা ছিলো কষ্টসাধ্য। তাও পরিবার সহযোগিতায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে সাকিব। এইচএসসি চালিয়ে যেতে সাকিব পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করবে।


ভাবলেও কিছু করা হয়ে উঠছিলো না শরীরের বিবশতায়। কোন রকম উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে সাকিব। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখত অনলাইনে টাকা ইনকাম করে পড়ালেখা চালাবে সে। তবে ল্যাপটপ বা একটি ভালো মোবাইল ফোন কেনার সাধ্য হয়ে উঠেনি তার। ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে নিতে পারেনি কম্পিউটার কোর্সও। গত কয়েকমাস পূর্বে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেকার ও স্থানীয় দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসেন সজীব চালু করেন উখিয়া উপজেলা ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার। এক বড় আপুর মাধ্যমে ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স চালুর খবর পায় সাকিব। ভর্তি হন সেখানে। সাকিবের অদম্য স্পৃহা ও চেষ্টায় কোর্সের পরীক্ষায় প্রথম হন সাকিব। সাকিবের স্পৃহা দেখে মুগ্ধ হন জেলা প্রশাসক। উপহার হিসেবে তার হাতে তোলে দেন একটি ট্যাব। সাকিবের প্রশিক্ষক এরফান হোসাইন জানান, সাকিব ভালো করতে পারলে একটি ল্যাপটপ দেওয়ার উপহার দিবেন বলে কথা দেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের ঘোষণায় দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে তিন মাসে সাকিব আয় করে ৪০০ ডলার। শত ব্যস্ততার মাঝেও কথা রাখেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এবার সাকিবকে ডেকে তার হাতে তুলে দেন এইচপি ল্যাপটপ। ল্যাপটপ পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন সাকিব। সাকিব বলেন, ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পেরে যেমন ইউএনও মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তেমনি জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের প্রতি রইলো অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি আমাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন। আমার সাধ্য ছিলো না ল্যাপটপ কেনার। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি এখন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। গত ২১ সেপ্টেম্বরে আমি ২ শ' ডলার তুলেছি। যা আমার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য অনুষঙ্গ পূরণ করতে সাহায্য করছে। সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমার প্রশিক্ষক। সাকিব জানান, আমার চেষ্টা দেখে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আমাকে প্রথমে ট্যাব উপহার দেন। ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে পারলে এরপর তিনি আমাকে একটি ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ উপহার দেন। এখন এটি নিয়ে আমি ফ্রিল্যান্সিং করি এবং পড়ালেখার খরচও নিজে চালিয়ে নিতে পারছি। সাকিব জানান, ভবিষ্যতে তার সামর্থ্য হলে একটি কম্পিউটার কোর্স চালু করবেন। সেখানে বেকার যুবকদেরকে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলবেন । শারীরিকভাবে অক্ষমদেরকে এই কাজে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে যাবো। যেন তারা সমাজের বোঝা না হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post